ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ফরাসি ভূখণ্ড মায়োটে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় চিডো'র আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ফরাসি ভূখণ্ড মায়োটে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় চিডো'র আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দ্বীপটি কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। স্থানীয় সময় শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় চিডো তাণ্ডব চালায় ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত দ্বীপটিতে। ঘণ্টায় ২২৬ কিলোমিটার বেগে মায়োটে আছড়ে পড়ে শক্তিশালী ঝড়টি। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় অঞ্চলটি। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো দ্বীপটি। বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

শ’ শ’ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবং হাজার হাজার বাড়িঘর, সরকারি ভবন, হাসপাতাল ও অস্থায়ী আবাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিনিয়র কর্মকর্তা বিউভিলের উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এ খবর জানায়। তিনি আরও বলেন, ফরাসি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিমানবন্দর ঘূর্ণিঝড় চিডো'র তাণ্ডবে বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষতির কারণে তাদের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডার লিয়েন রোববার এক্স-এ পোস্টে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ঘূর্ণিঝড় চিডো'র বিধ্বংসী আঘাতের পরে আমরা আগামী দিনগুলোতে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানোম ঘেব্রেইসাস এক্স-এ পোস্টে বলেন, ঘূর্ণিঝড় চিডো'র বিধ্বংসী আঘাতের পর ’প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার সহায়তা করতে প্রস্তুত।'

পোপ ফ্রান্সিস, রোববার ফরাসি ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি সকলের প্রতি মায়োটের বাসিন্দাদের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা সেখানকার জনগণকে সাহায্য করার জন্য কাজ করবেন।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, ঝড়ের কবলে পড়া মানুষদের সাহায্য করতে তারা মোজাম্বিকে রয়েছে।

আবহাওয়া পরিষেবাগুলো জানিয়েছে, মোজাম্বিকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় চিডো রোববার ভোরে উত্তরের শহর পেম্বার প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) দক্ষিণে আছড়ে পড়ে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা তিনজনে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪) ফরাসি ওভারসিজ অঞ্চল মায়োত্তেতে ঘূর্ণিঝড় চিডোর ধ্বংসযজ্ঞের পর গভীর দুঃখপ্রকাশ এবং ফ্রান্সের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদি ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং এই কঠিন সময়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি লিখেছেন, “মায়োত্তেতে ঘূর্ণিঝড় চিডোর ধ্বংসযজ্ঞে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমার চিন্তা ও প্রার্থনা ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে। আমি নিশ্চিত যে, প্রেসিডেন্ট @এমানুয়েল ম্যাক্রঁ-র নেতৃত্বে ফ্রান্স এই বিপর্যয় দৃঢ়তা ও সংকল্পের সঙ্গে অতিক্রম করবে। ভারত ফ্রান্সের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য দিতে প্রস্তুত।”

প্রধানমন্ত্রী মোদির সহমর্মিতার বার্তা ভারতের আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং কূটনৈতিক ভূমিকার প্রতিফলন। ভারতের এই সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাপী মানবিক সাহায্য এবং সহযোগিতার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে।

ফ্রান্স এরই মধ্যে ২০ টন খাদ্য এবং পানি সরবরাহসহ জরুরি সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোও স্থানীয় সরকারগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

ঘূর্ণিঝড় চিডোর প্রভাবে মায়োত্তে এবং আশপাশের অঞ্চলে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সামনে নিয়ে এসেছে। উপকূলীয় এবং দ্বীপ সম্প্রদায়গুলোকে সুরক্ষিত রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো হয়েছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।