২০০৫ সালে শুরু হওয়া স্লিনেক্স মহড়া ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতার অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠেছে।
বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক নৌ মহড়া স্লিনেক্স-২৪ (শ্রীলঙ্কা-ভারত নৌ মহড়া) ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে বিশাখাপত্তনমে পূর্ব নৌ কমান্ডের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক সহযোগিতা ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি দুটি ধাপে বিভক্ত: হারবার পর্ব এবং সমুদ্র পর্ব।

২০০৫ সালে শুরু হওয়া স্লিনেক্স ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতার অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠেছে। এটি পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানো, আন্তঃক্রিয়াশীলতা উন্নত করা এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।

অংশগ্রহণকারী ইউনিট
ইন্ডিয়ান ন্যাভাল শিপ (আইএনএস) সুমিত্রা, একটি সারিউ-ক্লাস নৌ অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল এবং একটি বিশেষ বাহিনীর দল। অপরদিকে শ্রীলঙ্কার ন্যাভাল শিপ (এসএলএনএস) সায়ুরা, একটি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল এবং এতে একটি বিশেষ বাহিনীর দলও অংশ নিয়েছে।

মহড়ার গঠন
স্লিনেক্স-২৪ দুটি ধাপে পরিচালিত হবে:

হারবার পর্ব (১৭-১৮ ডিসেম্বর): এই পর্বটি পেশাদার ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক মজবুত করার দিকে লক্ষ্য করবে। এতে ইন্টারঅ্যাকশন, ক্রস-ট্রেনিং সেশন এবং যৌথ পরিকল্পনা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে দুই নৌবাহিনীর মধ্যে বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে।

  • সমুদ্র পর্ব (১৯-২০ ডিসেম্বর): স্লিনেক্স-২৪ এর ব্যবহারিক অংশে জটিল সামুদ্রিক মহড়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা সমন্বয় ও অপারেশনাল দক্ষতা বাড়াবে।
  •  প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:
  • বিশেষ বাহিনীর অপারেশন
  • গান ফায়ারিং ড্রিল
  • যোগাযোগ ও সিমানশিপ প্রশিক্ষণ
  • নেভিগেশন অনুশীলন
  • হেলিকপ্টার অপারেশন
স্লিনেক্স-২৪ এর সময় শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিসানায়েকের ভারত সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তার সফরে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং ভারতবিরোধী কার্যকলাপের জন্য শ্রীলঙ্কার ভূখণ্ড ব্যবহৃত হবে না বলে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

চীনা সামরিক উপস্থিতি, যেমন চীনা যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের আগমন নিয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগের পটভূমিতে এই বিবৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রপতি দিসানায়েকের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে, দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। যৌথ নৌ মহড়া এই কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ভারতীয় নৌবাহিনীর চতুর্থ এবং শেষ সারিউ-ক্লাস প্যাট্রোল ভেসেল আইএনএস সুমিত্রা স্লিনেক্স-২৪ এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গোয়া শিপইয়ার্ড লিমিটেড দ্বারা নকশা ও নির্মিত এই জাহাজ বহর সমর্থন, অফশোর প্যাট্রোলিং এবং সমুদ্র পথে যোগাযোগ পর্যবেক্ষণের মতো দায়িত্ব পালন করে। এটি ভারতের প্রেসিডেন্টিয়াল ইয়ট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

ভারতের সামুদ্রিক উদ্যোগ
স্লিনেক্স-২৪ এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ভারত ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তার সামুদ্রিক উদ্যোগ বাড়াচ্ছে। স্লিনেক্স-এর পাশাপাশি মালদ্বীপের সঙ্গেও যৌথ সামুদ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর মালদ্বীপে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের দুটি জাহাজের চারদিনের সফর সেই প্রচেষ্টারই একটি উদাহরণ।

ভারত সামুদ্রিক পথ সুরক্ষিত করা, জলদস্যুতা ও পাচারের মতো হুমকি রোধ করা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

স্লিনেক্স-২৪ ভারত ও শ্রীলঙ্কার সামুদ্রিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করবে এবং অবৈধ কার্যক্রম, সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার মতো যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করবে।

যৌথ মহড়ার মাধ্যমে দুই দেশের নৌবাহিনী তাদের দক্ষতা বাড়াবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সামুদ্রিক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করবে। আইএনএস সুমিত্রা এবং এসএলএনএস সায়ুরার যৌথ অংশগ্রহণ এই অঞ্চলে সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় দুই দেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।