সামুদ্রিক বিশেষ অভিযান এবং সমুদ্র উদ্ধার ক্ষমতা উন্নয়নে এই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানা গিয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী এবং মরিশাসের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ১৫তম বার্ষিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যা দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক কর্মক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর মেরিন কমান্ডো এবং ডাইভিং মোবাইল ট্রেনিং টিম (এমটিটি) এবারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রধান ভূমিকা পালন করছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ শেয়ার করা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, এই প্রোগ্রামটি মরিশাস পুলিশ ফোর্সের (এমপিএফ) সঙ্গে অপারেশনাল সামঞ্জস্য উন্নত করতে তৈরি করা হয়েছে।

এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো সামুদ্রিক বিশেষ অভিযান এবং সমুদ্র উদ্ধার ক্ষমতা বাড়ানো। মরিশাসের বাহিনীকে উন্নত দক্ষতা এবং কৌশল প্রদানের মাধ্যমে তাদের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা শক্তি আরও মজবুত করা এবং আঞ্চলিক উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

এই প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী উন্নত ডাইভিং এবং আন্ডারওয়াটার সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, যা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মরিশাস পুলিশ ফোর্সকে উন্নত প্রযুক্তি এবং কৌশলগত দক্ষতায় সজ্জিত করা হচ্ছে, যা তাদের সামুদ্রিক জরুরি পরিস্থিতি, উদ্ধার অভিযান, এবং আন্ডারওয়াটার হুমকির ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম করবে।

এ বছরের প্রশিক্ষণের অন্যতম আকর্ষণ হলো বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি নির্ভর মহড়া। এতে জলদস্যু প্রতিরোধ অভিযান, সমুদ্রের মাঝখানে জিম্মি উদ্ধার এবং গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষার মতো পরিস্থিতি অনুশীলন করা হচ্ছে।

এই বার্ষিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ভারত এবং মরিশাসের মধ্যে ঐতিহাসিক এবং কৌশলগত সম্পর্কের গুরুত্ব প্রতিফলিত করে। ১৯৪৮ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর এক বছরের মধ্যেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এরপর থেকে এই সম্পর্ক আস্থা, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) ভারত-মরিশাস সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরে জানিয়েছে যে, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, উন্নয়ন প্রকল্প, সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা এই সম্পর্কের মূল স্তম্ভ। মহাত্মা গান্ধী ইনস্টিটিউট, ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার এবং ওয়ার্ল্ড হিন্দি সেক্রেটারিয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মরিশাসে ভারতের সাংস্কৃতিক এবং উন্নয়নমূলক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে।

এই বছরের শুরুতে ভারত আগালেগা দ্বীপপুঞ্জে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের বিমানপথ এবং উন্নত জেটি সুবিধাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প উদ্বোধন করেছে। এসব উন্নয়ন ভারতের "সাগর" (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন) দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং সহযোগিতামূলক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেয়।

কৌশলগত প্রকল্পের পাশাপাশি, মরিশাসের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইসিপিএ) দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের দৃঢ়তাকে প্রতিফলিত করে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। যদিও ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, ভারত এবং মরিশাসের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সহযোগিতামূলক কূটনীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক