প্রাপ্ত তথ্যমতে, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় এ পর্যন্ত ১৮০ জন ভারতীয় শান্তি রক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘের শান্তি নির্মাণ কমিশন (পিসবিল্ডিং কমিশন বা পিবিসি)-এ ২০২৫-২০২৬ মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হয়েছে ভারত। এ পুনর্নির্বাচন বৈশ্বিক শান্তি প্রচেষ্টায় ভারতের নেতৃত্বের অবস্থানকে আরও মজবুত করেছে। ২০০৫ সালে কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি শান্তি নির্মাণে ভারতের সক্রিয় ভূমিকার ধারাবাহিকতা।
ভারত শান্তি নির্মাণ কমিশনের একটি প্রাথমিক সদস্য, যা সংঘাত-পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য কৌশলগত সমর্থন প্রদান করে। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী মিশনে অন্যতম প্রধান অবদানকারী এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সমর্থক হিসেবে, ভারত সর্বদা শান্তি, উন্নয়ন, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পুনরুদ্ধারের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর, জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এক বার্তায় জানায়: “ভারত ২০২৫-২০২৬ মেয়াদের জন্য জাতিসংঘের পিসবিল্ডিং কমিশনে পুনর্নির্বাচিত হয়েছে। প্রাথমিক সদস্য এবং শান্তিরক্ষা মিশনের বড় অবদানকারী হিসেবে, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পিবিসি-এর সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে।”
শান্তি নির্মাণ কমিশন ও ভারতের ভূমিকা
২০০৫ সালে পিবিসি প্রতিষ্ঠা করা হয় সংঘাত-পরবর্তী পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য। এর কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদকে শান্তি নির্মাণ কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান, পুনরুদ্ধারের জন্য সম্পদ সমন্বয়, এবং টেকসই শান্তির জন্য সেরা পদ্ধতিগুলি বিকাশ করা।
কমিশনে ৩১টি সদস্য রাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত, যাদের মধ্যে সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়। পাশাপাশি শীর্ষ আর্থিক এবং সৈন্য অবদানকারী দেশগুলো কমিশনে প্রতিনিধিত্ব করে। এ ধরনের বৈচিত্র্যময় প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত হয়।
জাতিসংঘ শান্তি রক্ষায় ভারতের অবদান
ভারত জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী মিশনে সামরিক এবং পুলিশ কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে প্রায় ৬,০০০ ভারতীয় শান্তি রক্ষী বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় নিয়োজিত রয়েছেন। দক্ষিণ সুদান থেকে শুরু করে লেবানন পর্যন্ত, ভারতীয় শান্তি রক্ষীরা স্থিতিশীলতা রক্ষা, বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা, এবং সম্প্রদায় পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ভারতের এই ঐতিহ্য আত্মত্যাগেও চিহ্নিত। এ পর্যন্ত প্রায় ১৮০ জন ভারতীয় শান্তি রক্ষী কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন।
পিবিসি-তে সদস্য হিসেবে ভারত শান্তি নির্মাণ, মানবিক, উন্নয়নমূলক এবং নিরাপত্তা উদ্যোগগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পিবিসি-র দেশভিত্তিক এবং আঞ্চলিক আলোচনাগুলো সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সম্পদ ও প্রচেষ্টা ভাগাভাগি করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।
ভারতের মূল অগ্রাধিকার
পিবিসি-তে ভারতের কার্যক্রমের মূল ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:
টেকসই পুনরুদ্ধার: সংঘাত-পরবর্তী অঞ্চলে অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠান এবং শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠনে দেশীয় নেতৃত্বাধীন কৌশলকে সমর্থন করা।
মিশন পরিবর্তন: শান্তি রক্ষী মিশন থেকে স্থানীয় নেতৃত্বাধীন উদ্যোগে সুষ্ঠু পরিবর্তন নিশ্চিত করা।
উদ্ভাবনী অর্থায়ন: প্রাথমিক পুনরুদ্ধার এবং টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টাগুলোর জন্য পূর্বনির্ধারিত অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তি নির্মাণে গুরুত্ব
শান্তি নির্মাণে ভারতের একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি হলো অন্তর্ভুক্তিমূলকতা। ভারত সর্বদা নারী এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পক্ষে কাজ করে আসছে। তারা সম্প্রদায়ের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০২৫-২০২৬ মেয়াদের জন্য পিবিসি-তে ভারতের অংশগ্রহণের মূল অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো।
- শান্তি নির্মাণের মূল ভিত্তি হিসেবে টেকসই উন্নয়নকে প্রচার করা।
- সংঘাত-প্রবণ দেশগুলোকে মিশন পরিবর্তন এবং পুনর্গঠনে সমর্থন বৃদ্ধি।
পুনর্নির্বাচনের মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক শান্তি এবং ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য এগিয়ে নিতে পারবে। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষার অন্যতম বড় অবদানকারী এবং টেকসই উন্নয়নের প্রবক্তা হিসেবে ভারত বৈশ্বিক শান্তি প্রচেষ্টায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রাখছে।
বিশ্বব্যাপী সংঘাত-পরবর্তী পুনর্গঠন এবং টেকসই শান্তি নিশ্চিত করার জন্য ভারতের এই পুনর্নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। শান্তি রক্ষার অভিজ্ঞতা এবং অঙ্গীকারের মাধ্যমে ভারত জাতিসংঘের শান্তি নির্মাণ কমিশনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক