৯২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত জটিলতার কারণে ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রয়াত হন।
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, যিনি একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং দুইবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁর শেষকৃত্য শনিবার দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশ-বিদেশ থেকে শোকবার্তা আসতে থাকে, যা তাঁর ভারতের উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলি
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁকে “এক বিরল রাজনীতিবিদ” হিসেবে অভিহিত করেন, যিনি একাধারে একাডেমিয়া এবং শাসন ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেন, “জাতির প্রতি তাঁর সেবা, কলঙ্কমুক্ত রাজনৈতিক জীবন এবং অতুলনীয় নম্রতা সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি ২০১৪ সালে ড. সিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন, গভীর শোক প্রকাশ করেন। এক্স-এ দেওয়া পোস্টে তিনি ড. সিংকে “ভারতের অন্যতম সেরা নেতা” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “সংসদে তাঁর হস্তক্ষেপ অত্যন্ত অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি জনগণের জীবনমান উন্নত করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।”

বিশ্বব্যাপী শোক
বিশ্ব নেতারাও ড. সিংয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁকে “একজন প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক” হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, “তাঁর অগ্রণী কাজ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের দেশ এবং বিশ্বকে শক্তিশালী করবে।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন তাঁকে “যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত অংশীদারিত্বের অন্যতম সেরা সমর্থক” হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “তাঁর কাজ আমাদের দুই দেশের গত দুই দশকের অনেক সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করেছে।”

কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার তাঁকে “অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও সততার অধিকারী একজন ব্যক্তি” বলে অভিহিত করেন। এদিকে, আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তাঁকে “আফগান জনগণের এক অক্লান্ত মিত্র ও বন্ধু” হিসেবে বর্ণনা করেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা আইবিএসএ (ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা) এবং ব্রিকসের মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তাঁর সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “ভারতের জনগণের প্রতি আমার সমবেদনা। ড. সিংয়ের দক্ষিণ গোলার্ধের সহযোগিতা এবং ন্যায়বিচারের স্বপ্ন চিরকাল আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।”

শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপক্ষে তাঁকে “একজন দূরদর্শী অর্থনীতিবিদ” হিসেবে অভিহিত করেন, যার উদারনীতির নীতি ভারতকে এক নতুন সমৃদ্ধির যুগে প্রবেশ করিয়েছিল।

এক অনন্য জীবন
ড. মনমোহন সিং ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) সরকারকে নেতৃত্ব দেন এবং ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সততা, নম্রতা এবং নিষ্ঠা তাঁকে রাজনৈতিক পরিসরে ব্যাপক সম্মান এনে দেয়।

অসাধারণ অবদান
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ড. সিং অর্থনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মচারী হিসেবে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। তিনি রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর, পরিকল্পনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ এবং ভারতের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের বাজেটে তাঁর অর্থনীতির উদারকরণের সিদ্ধান্ত ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কার্যকালীন সময়ে এনআরইজিএ (জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন), ভারত-মার্কিন পারমাণবিক চুক্তি এবং বহু সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পের সূচনা হয়।

সরকার সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। এই সময়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ড. মনমোহন সিংয়ের মতো একজন নেতার প্রতি জাতির শ্রদ্ধা অব্যাহত। তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কার, শাসনব্যবস্থা এবং কূটনীতিতে অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।