সফরটি মরিশাসের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের প্রতি ভারতের গুরুত্বকে জোরালোভাবে তুলে ধরেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
মরিশাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির তিন দিনের সরকারি সফর ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে শেষ হয়েছে। এই সফর দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধন, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি এবং জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়নের প্রতি ভারতের অঙ্গীকারের আরেকটি ধাপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এই সফরে পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রি মরিশাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ, যেমন রাষ্ট্রপতি ধরমবীর গোখুল, প্রধানমন্ত্রী নবীনচন্দ্র রামগোলাম, উপ-প্রধানমন্ত্রী পল বেরেঞ্জার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধনঞ্জয় রামফুলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী রামগোলামের সঙ্গে সাক্ষাতে, পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি মরিশাসের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির প্রতি ভারতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী রামগোলামকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান।
দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সম্পূর্ণ ক্ষেত্র নিয়েই আলোচনা হয়েছে, বিশেষ করে উভয় দেশের অনন্য অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এই সফরটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী রামগোলামকে ১১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে দেওয়া শুভেচ্ছা বার্তার ধারাবাহিকতা। এটি দুই দেশের সম্পর্কের প্রতি ভারতের গুরুত্ব এবং আন্তরিকতাকে আরও জোরালো করেছে।
ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’, ‘ভিশন সাগর’, এবং ‘আফ্রিকা ফরোয়ার্ড’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এই উদ্যোগটি গ্লোবাল সাউথের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতির একটি অংশ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, এই সফর দুই দেশের মধ্যে বহু-মাত্রিক দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, যা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ
আপ্রবাসি ঘাট সফর: পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান আপ্রবাসি ঘাট পরিদর্শন করেন, যা ভারত এবং মরিশাসের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতীক। এই স্থানটি ভারতীয় চুক্তিভুক্ত শ্রমিকদের আগমনের স্মৃতি বহন করে এবং দুই দেশের গভীর সংযোগের একটি প্রতীক।
উন্নয়ন প্রকল্প: মিশ্রি মরিশাসে ভারতের সহযোগিতায় পরিচালিত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন, যার মধ্যে সিভিল সার্ভিস কলেজ এবং ক্যাপ মালহিউরক্স এলাকায় একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত।
পরিবেশ উদ্যোগ: ‘এক পেড় মা কে নাম’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে, মিশ্রি একটি নরফোক আইল্যান্ড পাইনের চারাগাছ রোপণ করেন।
সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধনকে শক্তিশালী করা
মরিশাসের জনসংখ্যার ৭০% ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায়, দুই দেশের মধ্যে এক অনন্য সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে। এই অংশীদারিত্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো:
পর্যটন: ২০০৪ সালে চালু হওয়া ভিসা-মুক্ত নীতি প্রতি বছর প্রায় ৮০,০০০ ভারতীয় পর্যটকের মরিশাসে ভ্রমণকে উৎসাহিত করেছে।
শিক্ষা: প্রায় ২,০০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী মরিশাসে চিকিৎসা ও ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন, যা শিক্ষাগত বিনিময়কে আরও শক্তিশালী করছে।
ওসিআই সুবিধা: ভারতীয় বংশোদ্ভূত মরিশিয়ানদের জন্য ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া কার্ডের বিশেষ সুবিধা দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে মরিশাসের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। সামুদ্রিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব প্রসারিত হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রির এই সফর মরিশাসের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতি ভারতের অটল প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।