চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, বলছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভারত ও চীন সীমান্ত অতিক্রম সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর ২০২৪) জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বেইজিংয়ে উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনার কয়েক দিনের মধ্যেই এ কথা জানানো হয়।

২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ২৩তম বিশেষ প্রতিনিধি (এসআর) বৈঠকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে কৈলাস মানসসরোবর যাত্রার পুনরায় শুরু, আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর তথ্য আদান-প্রদান এবং সীমান্ত বাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলোচনার “ইতিবাচক দিকনির্দেশনা”কে গুরুত্ব দিয়ে বলেছে যে, এই আলোচনার লক্ষ্য হল শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, “আলোচনা ইতিবাচক দিকনির্দেশনায় এগিয়েছে। এর পরে যা প্রয়োজন, তা সীমান্ত অতিক্রম সহযোগিতা এগিয়ে নিতে করা হবে।”

২০২০ সালের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর এই প্রথমবার এসআর বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে লাদাখের পূর্বাংশে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পশ্চিমাঞ্চলে ফ্রন্টলাইন বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভারত ও চীন একমত হয়। এই চুক্তি ডেমচক এবং ডেপসাং-এ দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা নিরসনে সাহায্য করেছে।

২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর কাজান, রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সীমান্ত ইস্যু সমাধানের জন্য বিশেষ প্রতিনিধি বৈঠক পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সম্মত হন।

এসআর বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো কৈলাস মানসসরোবর যাত্রার পুনরায় শুরু। এই তীর্থযাত্রা ২০২০ সালে উত্তেজনার কারণে স্থগিত হয়েছিল। এছাড়াও, সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালুর বিষয়টি অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে।

জয়সওয়াল আরও বলেন, “অক্টোবর থেকে আমরা বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেছি। এগুলোতে বলা হয়েছে যে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

বৈঠকে উভয় পক্ষ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৫ সালে নির্ধারিত রাজনৈতিক মাপকাঠি ও নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্ত ইস্যু সমাধানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “২০২০ সালের ঘটনাগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে তারা সীমান্তে শান্তি রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।”

২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তবে সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে সম্পর্ক কিছুটা উন্নতির দিকে এগোচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-কে পরবর্তী বৈঠকের জন্য ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ডিসেম্বর ২০২৪-এ অনুষ্ঠিত বৈঠক দুই দেশের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সীমান্ত সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন উদ্যোগ ভারত-চীন সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।