সফরটি ভারতের সামগ্রিক কৌশলের অংশ, যা উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক ও সামুদ্রিক সম্পর্ক গভীর করতে পরিচালিত
পারস্য উপসাগরে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ মোতায়েনের অংশ হিসেবে, ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ (আইএনএস) তীর এবং ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জাহাজ (আইসিজিএস) বীর ১২ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে বাহরাইনের মানামা বন্দরে পৌঁছায়।
এই সফরের মূল উদ্দেশ্য নৌবাহিনীগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং ভারতীয় নৌবাহিনী ও রয়্যাল বাহরাইন নৌবাহিনীর (আরবিএনএফ) মধ্যে আন্তঃকার্যক্ষমতা বাড়ানো। এই মোতায়েনে বিভিন্ন পেশাদার বিনিময় ও যৌথ মহড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রথম প্রশিক্ষণ স্কোয়াড্রনের বাহরাইন সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করার লক্ষ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে পরিচালিত হয়েছে। পেশাদার বিনিময়, ক্রস-শিপ ভিজিট, এবং যৌথ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ব্যান্ড পারফর্মেন্স এবং কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার কার্যক্রমের মতো বিভিন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ কার্যক্রমও পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই সফরের অন্যতম প্রধান ইভেন্ট হলো উভয় দেশের নৌবাহিনীর অপারেশনাল দলের মধ্যে একটি সমন্বয় সভা, যেখানে যৌথ অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সামুদ্রিক অংশীদারিত্ব মহড়ার পরিকল্পনা করা হবে। এছাড়াও, ভারতীয় নৌবাহিনীর সাগর শিক্ষানবীশরা আরবিএনএফ এর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সুবিধা পরিদর্শন করবেন, যা তাদের সামুদ্রিক দক্ষতা ও জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
বাহরাইনের পাশাপাশি, এই সফরে বাহরাইন ভিত্তিক কম্বাইন্ড ম্যারিটাইম ফোর্সেস (সিএমএফ) এর সঙ্গেও আলোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারত ২০২২ সাল থেকে সিএমএফ এর সহযোগী অংশীদার হিসেবে পশ্চিম ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করে আসছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে সমান্তরাল যোগাযোগ
যখন আইএনএস তীর এবং আইসিজিএস বীর বাহরাইনে রয়েছে, তখন প্রথম প্রশিক্ষণ স্কোয়াড্রনের আরেকটি জাহাজ আইএনএস শার্দুল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের রাশিদ বন্দরে পৌঁছেছে। ভারতীয় দূতাবাস এবং আমিরাত নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের দ্বারা স্বাগত প্রাপ্ত এই সফর প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার জন্য বন্দরে বিভিন্ন আন্তঃসম্পর্ক ও যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভারতের বৃহত্তর সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে এই মোতায়েন উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক ও সামুদ্রিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রশিক্ষণ, আন্তঃকার্যক্ষমতা, এবং যৌথ নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলোতে ফোকাস দেওয়া হয়েছে।
বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ সফরের উদ্দেশ্য শুধু সামরিক সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং সাম্প্রদায়িক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কও বৃদ্ধি করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা দুই দেশের সমকক্ষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, প্রতিরক্ষা ও সামুদ্রিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন, সেইসঙ্গে পারস্য উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
উপসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব
প্রথম প্রশিক্ষণ স্কোয়াড্রনের বাহরাইন ও আমিরাত সফর ভারতের পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত উপস্থিতি বজায় রাখার একটি বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ। এই অঞ্চলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর নিকটে রয়েছে হরমুজ প্রণালী, যা বিশ্বের একটি বড় অংশের তেল সরবরাহের প্রধান পথ। এই সামুদ্রিক পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে শক্তি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে।
এই মোতায়েনটি ওমানের সাম্প্রতিক বন্দর সফরের পর পরিচালিত হয়েছে, যার মধ্যে ৯ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে মুসকট সফরও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওই সফরে ভারতীয় নৌবাহিনী ও রয়্যাল ওমান নৌবাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছিল, যেখানে যৌথ প্রশিক্ষণ এবং আন্তঃসম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
এই সফরের মাধ্যমে ভারত উপসাগরীয় অঞ্চলে তার সামুদ্রিক কৌশলকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক