ভারতের বিশাল সমুদ্রসীমায় ভারতীয় নৌবাহিনীর নারী কর্মকর্তাগণ প্রতিনিয়ত বিশাল বীরত্বগাঁথা প্রদর্শন করে চলেছেন।
ভারতের সামুদ্রিক ঐতিহ্য এবং সশস্ত্র বাহিনীতে লিঙ্গ সমতার প্রতীক হিসাবে, ভারতীয় নৌবাহিনীর দুই মহিলা অফিসার একটি ঐতিহাসিক বিশ্ব পরিক্রমায় অংশ নিতে যাচ্ছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর পালতোলা জাহাজ ইনএসভি তারিণীর বোর্ডে। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রূপা এ এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার দিলনা কে, যারা গত তিন বছর ধরে নিবিড়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, নাভিকা সাগর পরিক্রমার দ্বিতীয় সংস্করণে (নাভিকা সাগর পরিক্রমা II) অংশ নেবেন।
বিশ্বের মহাসাগরগুলো পাড়ি দেওয়ার এই চ্যালেঞ্জিং অভিযানটি ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং আত্মনির্ভর ভারতের বৃহত্তর ভিশনের প্রতীক। জাহাজ এবং এর পুরো ক্রু দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি।
নাভিকা সাগর পরিক্রমা II প্রথম সংস্করণের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে, যা ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই অভিযানে ছয়জন ভারতীয় নৌবাহিনীর মহিলা অফিসার সফলভাবে বিশ্ব পরিক্রমা সম্পন্ন করেছিলেন, যা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি নতুন মান স্থাপন করেছিল। এখন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রূপা এ এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার দিলনা কে সেই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত এবং দ্বিতীয় অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইনএসভি তারিণী, যা দেবী তারার নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং যা নৌযান এবং শক্তির প্রতীক, এই অভিযানের জন্য তাদের জাহাজ হিসাবে ব্যবহৃত হবে। বছরের পর বছর ধরে, ভারতীয় নৌবাহিনী তার পালতোলা জাহাজের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দিয়েছে। ইনএসভি মহাদেই এবং ইনএসভি তারিণীর মতো জাহাজে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে, নৌবাহিনী জাতির সামুদ্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং সমুদ্রযাত্রা দক্ষতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে।
এই ধরনের অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে কয়েক বছরের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, যা প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং শারীরিক সহনশীলতার সমন্বয়ে সম্পন্ন হয়। ভারতীয় নৌবাহিনী প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রূপা এবং দিলনা হাজার হাজার নটিক্যাল মাইল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, যা বিভিন্ন মহাসাগর পাড়ি দেওয়া এবং দ্বৈত পরিচালিত অভিযানে সম্পন্ন হয়েছে, তাদের দক্ষতা আরও দৃঢ় করেছে।
২০২৩ সালে, তারা গোয়া থেকে রিও ডি জেনিরো পর্যন্ত একটি চ্যালেঞ্জিং যাত্রার অংশ ছিলেন, যা কেপটাউন হয়ে হাজার হাজার নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করেছিল। এরপরে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে গোয়া-পোর্ট ব্লেয়ার-গোয়া এবং গোয়া থেকে পোর্ট লুইস, মরিশাস পর্যন্ত একটি অভিযানও সম্পন্ন করে। এই অভিযানগুলো তাদের নেভিগেশন, সহনশীলতা এবং সমুদ্রযাত্রার দক্ষতায় প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা জুগিয়েছে।
তাদের প্রশিক্ষণের সময়, এই দুই অফিসারকে পরামর্শ দিয়েছেন কমান্ডার অভিলাষ টমি (অব.), যিনি গোল্ডেন গ্লোব রেসে অংশগ্রহণকারী এবং এককভাবে বিশ্ব পরিক্রমার পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত। কমান্ডার টমি তাদের জন্য তার বিশাল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে দিয়েছেন, যা দীর্ঘ, বিচ্ছিন্ন সমুদ্র যাত্রার শারীরিক ও মানসিক চাহিদা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
নাভিকা সাগর পরিক্রমা II শুধু একটি পরিক্রমা সম্পন্ন করার বিষয় নয়; এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর লিঙ্গ সমতা, কার্যক্ষম উৎকর্ষতা এবং নারীদের চ্যালেঞ্জিং ভূমিকায় এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
এই অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে, ভারতীয় নৌবাহিনী সম্প্রতি নাভিকা সাগর পরিক্রমা II এর অফিসিয়াল লোগো উন্মোচন করেছে। লোগোটি একটি অষ্টকোণাকৃতি আকারের, যা ভারতীয় নৌবাহিনীকে প্রতিনিধিত্ব করে। সূর্য, যা আকাশীয় নেভিগেশনের প্রতীক, কেন্দ্রে অবস্থিত এবং একটি কম্পাস বিশ্ব মহাসাগরগুলোতে অভিযাত্রীদের পথ দেখায়। লোগোটিতে সর্ব-মহিলা ক্রুও তুলে ধরা হয়েছে।
ইনএসভি তারিণীর এই পরিক্রমা ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, যা লিঙ্গ সমতা প্রচার এবং ভারতের সামুদ্রিক দক্ষতা শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার অংশ। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক