এটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদানকারী হিসাবে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়
দুই দেশের নৌবাহিনীর সহযোগিতা আরও গভীর করার লক্ষ্যে, ভারতীয় নৌবাহিনী এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নৌবাহিনী একটি ইমপ্লিমেন্টিং এগ্রিমেন্ট (আইএ) স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে সাবমেরিন রেসকিউ সমর্থন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভারতীয় নৌবাহিনীর চিফ অ্যাডমিরাল দীনেশ কে. ত্রিপাঠী এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নৌবাহিনীর চিফ ভাইস অ্যাডমিরাল মন্ডে লোবেসে উপস্থিত ছিলেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সাবমেরিন কর্মীদের সুরক্ষার প্রতি প্রতিশ্রুতি আরও জোরালো হয়েছে এবং এটি দুই দেশের দীর্ঘদিনের সামুদ্রিক অংশীদারিত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
এই চুক্তির বিশেষ তাৎপর্য হলো, এটি সংকটময় পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার নৌবাহিনীকে সাবমেরিন রেসকিউ সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্ষমতাকে নিশ্চিত করে। কোনো দুর্ঘটনা বা জরুরি অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার সাবমেরিনের ক্ষেত্রে ভারতীয় নৌবাহিনী তার অত্যাধুনিক ডিপ সাবমারজেন্স রেসকিউ ভেহিকল (ডিএসআরভি) মোতায়েন করবে। উভয় নৌবাহিনী তাদের সম্পদ ও দক্ষতা একত্রিত করে কর্মীদের সুরক্ষা ও পানির নিচের কঠিন পরিবেশে কার্যক্ষমতা বজায় রাখার দিকে মনোযোগ দেবে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর দ্রুত সাবমেরিন রেসকিউ সমাধান
ভারতীয় নৌবাহিনীর ডিএসআরভি প্রোগ্রাম সাবমেরিন রেসকিউ-এর প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে শুরু হয়েছিল এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।
এই ধরনের প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ২০১৩ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর আইএনএস সিন্ধুরক্ষক দুর্ঘটনার পর, যা বিদ্যমান রেসকিউ সিস্টেমের সীমাবদ্ধতাগুলি প্রকাশ করে। এই দুর্ঘটনা একটি অত্যাধুনিক রেসকিউ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যার ফলে দুটি উন্নতমানের ডিএসআরভি ভারতীয় নৌবাহিনীতে সংযুক্ত হয়।
এই ডিএসআরভি গুলি যুক্তরাজ্যের জেমস ফিশার ডিফেন্স দ্বারা তৈরি এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত, যা তাদের ধরণের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত। এগুলির মধ্যে রয়েছে সাইড-স্ক্যান সোনার, যা দুর্যোগপূর্ণ সাবমেরিনের অবস্থান নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়, এবং সাবমেরিনের পরিস্থিতির প্রাথমিক মূল্যায়নের জন্য রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল (আরওভি)। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে, ডিএসআরভি একটি চাপযুক্ত ক্যাপসুলের সাথে সজ্জিত যা ৬৫০ মিটার গভীরতা থেকে কর্মীদের উদ্ধার করতে সক্ষম, যা পানির নিচে রেসকিউ অভিযানের জন্য অপরিহার্য সম্পদ।
এই ক্ষমতাগুলির মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনী বিশ্বব্যাপী অল্প কিছু নৌবাহিনীর মধ্যে একটি, যা গভীর সমুদ্রের সাবমেরিন রেসকিউ মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম। এই সক্ষমতা ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলে এবং দেশটিকে এই গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা অন্যান্য দেশকে দেওয়ার সুযোগও করে দেয়, যার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাও রয়েছে এই নতুন চুক্তির আওতায়।
প্রতিটি ডিএসআরভি একটি ডাইভে ১৪ জন কর্মী উদ্ধার করতে সক্ষম এবং এই সিস্টেমটি বায়ু, স্থল বা সমুদ্রপথে দ্রুত মোতায়েন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
এই সক্ষমতা আন্তর্জাতিক স্তরে পরীক্ষিত হয় যখন ভারতীয় নৌবাহিনী তার ডিএসআরভি গুলি ২০২১ সালে একটি নিখোঁজ ইন্দোনেশিয়ান সাবমেরিনের সন্ধানে মোতায়েন করে। যদিও ৫৩ জন ক্রু সদস্যদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, এই মোতায়েন ভারতীয় নৌবাহিনীর আন্তর্জাতিক রেসকিউ অভিযানে সহায়তা করার প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা প্রমাণ করে। ভারতীয় নৌবাহিনীর দ্রুত প্রতিক্রিয়া বিশ্বের নৌবাহিনীর কাছ থেকে স্বীকৃতি পায় এবং এই রেসকিউ সিস্টেমগুলির গুরুত্ব আরও সুস্পষ্ট হয়। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক