জয়শঙ্কর বলেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল মুক্ত, স্থায়ী, নিরাপদ ও সমৃদ্ধশালী করে তুলতে কোয়াড সহযোগিতা বৃদ্ধির করতেই হবে।
টোকিওতে শুরু হয়েছে কোয়াড বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক। ভারত, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রীরা এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর নিজের উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব যাচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক আর্থিক বিকাশ নিশ্চিত করার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছ ডিজিট্যাল সহযোগিতা সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরো জোরদার করতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল মুক্ত-অবাধ, স্থায়ী, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধশালী করে তুলতে কোয়াড সহযোগিতা বৃদ্ধির করতেই হবে।” জয়শঙ্কর বলেন, “মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গড়তে কোয়াডের বিকল্প নেই।”
গত বছর সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে হওয়া শেষ কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচিত বিষয়াদির অগ্রগতি নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন বিষয়ে মতামত এবং কোয়াডেরর নানা পদক্ষেপের ব্যাপারে মতবিনিময় হবে বলেও তিনি জানান।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়াদি ছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় এবং ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশগুলোর মধ্যে ভবিষ্যৎ সমঝোতা নিয়েও কথা হবে আজকের কোয়াড বৈঠকে। এর আগে ডক্টর জয়শঙ্কর অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী পেনিওয়াং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং শিক্ষা সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় আরো বাড়ানোর বিষয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাস্তবিক সহযোগিতা আরো দৃঢ় করার বিষয়ে ও তারা আলোচনা করেছেন।
এছাড়া, টোকিয়োর এডোগাওয়ায় ভারতের জাতির জনক মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর আবক্ষ মূর্তির উদ্বোধন করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়ানে আসিয়ান-এর বৈঠক সেরে কোয়াড বৈঠকে যোগ দিতে আজই দু’দিনের সফরে জাপানে এসেছেন তিনি। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যে কোনও দিন কোনও সমাধান উঠে আসে না, গান্ধী মূর্তির উদ্বোধন করে জয়শঙ্কর সে কথাই স্মরণ করান। বর্তমান দ্বন্দ্ব-দীর্ণ বিশ্বে আশি বছর আগে গান্ধীর বার্তাগুলির প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে উন্নতির লক্ষ্যে গান্ধীর দর্শনের গুরুত্বের কথা।
লাওসে বৈঠকে গিয়ে জয়শঙ্করের কথা হয়েছে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার প্রতি ‘পূর্ণ শ্রদ্ধা’ রাখার বিষয়ে জোর দিয়েছেন জয়শঙ্কর। কূটনৈতিক বন্ধন স্থিতিশীল রাখাটা যে দু’দেশের স্বার্থের সঙ্গেই জড়িয়ে, সেই বিষয়েও বার্তা দিয়েছেন তিনি। ২০২০ সালের মে মাসে গালওয়ানে সংঘর্ষের পর থেকে পূর্ব লাদাখে দুই দেশের সেনা মুখোমুখি হয়ে আছে। দু’জনেই বাহিনী সরানোর বিষয়টি দৃঢ় ভাবে পরিচালনা করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
‘গ্লোবাল সাউথ’-এর দেশগুলির উপরে যে ভারত-চিন সম্পর্কের প্রভাব পড়ে এবং তারাও যে পড়শি দু’দেশের সম্পর্ক ছন্দে ফেরানোর বিষয়ে একই ভাবে আগ্রহী, সে কথা বলেন ই। তাঁর আশা, ভারত-চিন উভয়েই পরস্পরের প্রতি ইতিবাচক ধারণা গড়ে তোলার পথ খুঁজতে উদ্যোগী হবে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক