উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের ধারাবাহিকতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী গতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
কোয়াড নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের সুযোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৌশলগত মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন।
এই বৈঠকগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয় এবং ভারত ও এই তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার পদক্ষেপগুলি নিয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা
ডেলাওয়্যারে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলসহ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলোতেও মতবিনিময় করেন।
এক বিশেষ আয়োজনে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার নিজ বাসভবনে উইলমিংটনে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন, যা ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বকে ত্বরান্বিত করেছে। তিনি ২০২৩ সালের জুন মাসে তার রাষ্ট্রীয় সফরের কথা এবং একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভারত সফরের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী উল্লেখ করেন, এই সফরগুলো ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে আরও গতি ও গভীরতা প্রদান করেছে।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন, আজ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি সামগ্রিক বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব উপভোগ করছে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বার্থের মিল ও প্রাণবন্ত জনগণ-জনগণের সম্পর্ক দ্বারা চালিত। উভয় নেতা এই সম্পর্কের শক্তি এবং স্থায়িত্বের ওপর আস্থা প্রকাশ করেন এবং এটি মানব প্রচেষ্টার প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী মোদী কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গেও বৈঠক করেন এবং দুই দেশের বহুমুখী সম্পর্ক পর্যালোচনা করেন। তাঁরা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ আরও গভীর সহযোগিতার বিষয়ে মতবিনিময় করেন এবং ব্যবসা থেকে জনগণ পর্যন্ত সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দুই প্রধানমন্ত্রী তাঁদের অনেক বৈঠকের কথা উষ্ণতার সাথে স্মরণ করেন, বিশেষ করে ২০২২ সালের মার্চ মাসে তাঁদের প্রথম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের কথা। প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রধানমন্ত্রী কিশিদাকে ভারত-জাপান বিশেষ কৌশলগত এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে অগ্রসর করতে তাঁর অবিচল নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রধানমন্ত্রী কিশিদাকে বিদায় জানান এবং তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সফলতা কামনা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে তাঁদের নবম সরাসরি সাক্ষাতে মিলিত হন। তাঁরা স্বীকার করেন যে, উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত যোগাযোগ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী গতি দিয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুসারে, দুই নেতা রাজনৈতিক ও কৌশলগত, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা ও গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য শক্তি, এবং জনগণ-জনগণের সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থের বিষয়েও মতবিনিময় করেন।
“দুই নেতা বহুপাক্ষিক ফোরামে সহযোগিতা আরও জোরদার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ভারত-অস্ট্রেলিয়া সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন,” পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বৈঠকের সময় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসারে গুরুত্বারোপ করেন, বিশেষ করে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা উৎপাদন, এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই সহযোগিতা, ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী জলবায়ু পরিবর্তন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং উভয় দেশকে এই খাতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তাঁরা একমত হন যে, শিক্ষাবিদ এবং গবেষণা বিনিময় উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে এবং ভবিষ্যত সহযোগিতা আরও প্রসারিত করবে।
উভয় নেতাই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করার বিষয়ে অঙ্গীকার করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বৈঠকগুলো ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করেছে। এই বৈঠকগুলোর ফলাফল শুধু তিন দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবে না, বরং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক